মো.মাহবুব আলম :
একের পর এক সংবাদ প্রকাশ হলেও নিজের ক্ষমতা আর প্রভাব খাটিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করতে ব্যস্ত আওয়ামীলীগ নেতা কায়সার ই আলম প্রধানের বিরুদ্ধে “জাল জালিয়াতি ,প্রতারনা ,জুয়া ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ কানাডায় স্ত্রী সন্তানের নিকট হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার তদন্ত পূর্বক বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা এবং পাওনা ২৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরনসহ উদ্ধারে সহযোগিতা করার” আবেদন জানিয়ে দুদকে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী আরিফুর রহমান। গেলো ৩১ অক্টোবর দুদক চেয়ারম্যান বরাবর দেওয়া অভিযোগনামায় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতির। সেখানে ব্যক্তিস্বার্থে রীট করার অনুমোদন দানের জন্য আবেদন করা হয়। পাশাপাশি অভিযুক্ত কায়সার ই আলম প্রধানেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
অভিযোগে বলা হয় “আমি আরিফুর রহমান একজন ভুক্তভোগী। আপনাকে এই মর্মে অভিযোগ করিতেছি, জনাব কায়সার-ই-আলম প্রধান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জুপিটার পাবলিকেশন্স ও প্রেসিডিয়াম সদস্য, বঙ্গবন্ধু জয় বাংলা লীগ, কেন্দ্রীয় কমিটি (আওয়ামী লীগের ভূঁইফোড় সংগঠন); ঠিকানা: ৪/৬, গ্রীণ হাউজ কটেজ, সেগুনবাগিচা, ঢাকা; স্হায়ী ঠিকানা: পিতা: আব্দুল গফুর মাষ্টার, গ্রাম: ধুকুন্দী, উপজেলা: বেলাব, জেলা: নরসিংদী- একজন জমি দখলদার ও প্রতারক। তাঁর বিরুদ্ধে নিম্নোক্ত দৈনিক কালের কন্ঠের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি আমলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি (সংযুক্ত)।
https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/10/08/1433069; দৈনিক কালের কন্ঠ, অনলাইন প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১৩:২৪। জুপিটার কায়সারের দখলে নিজ গ্রামে দেড় শ বিঘা জমি! এছাড়াও দেশের শীর্ষ মিডিয়া গুলোতেও তার অনিয়ম,জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার বিষয়গুলো ওঠে এসেছে।
কায়সার সাহেবের কাছ থেকে আমরা দেড় বছর আগে, নরসিংদী বেলাব উপজেলার উজিলাব মৌজার আরএস নং-৬৭ ,খতিয়ান নং -এস এ-৯৬৯ ও আর এস ৮৯৮; খারিজা খতিয়ান ও জোত নং – ২৭৮৯; দাগ নং -এস এ ১১২২,আর এস ২৬৫৮ দাগে রকম বাগান ষোল আনায় ৬০ শতাংশ ,ইহার অংশ খারিজকৃত জমি ৩৭ শতাংশ , ইহার কাতে বিক্রিত জমি ৯.২৫ শতাংশ ,যার মূল্য ২৮০০০০০/- টাকা মূল্য নির্ধারন হয়। আমি গত ১৬/৭/২০২৩ তারিখে ১৫০০০০০/-পনের লক্ষ টাকা প্রদান করি এবং ১৮/১০/২৩ তারিখে আরো ৮০০০০০/-আট লক্ষ টাকা প্রদান সহ সর্বমোট ২৩০০০০০/-(তেইশ লক্ষ )টাকা প্রদান করি এবং ২৩/১০/২০২৩ তারিখ বিবাদী আমাকে দলিল রেজিষ্ট্রেশন করে দিবে বলে জনাই। সেই সুবাদে আমি গত ২৩/১০/২০২৩ তারিখ কায়সার আলম দলিল রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য বেলাবো সাব রেজিঃ অফিসে গিয়ে দলিল সম্পাদনের জন্য ১০ পাতা স্ট্যম্পে স্বাক্ষর ও টিপসই করেন। কিন্তু সাব রেজিঃ অফিসে রেজিষ্ট্রেশন না করে দিয়ে সেখান হইতে কৌশলে চলিয়া আসে। পরে জানতে পারি, উক্ত জমি আরো চারজনের কাছে বিক্রি করেছেন। তাঁর জালিয়াতির কথা জানতে পেরে আমরা টাকা ফেরত চাইলে তিনি আমাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।’
বহুবিচিত্র এক চরিত্র কায়সার সাহেবের। বেশভূষা দেখে নিরীহ গোবেচারা মনে হলেও তিনি ভয়ংকর! যেন হলিউড মুভির কোনো মাফিয়া চরিত্র! স্বার্থসিদ্ধির জন্য সব কিছু করতে পারেন তিনি। তিনি আমার পাওনা ২৩ লক্ষ টাকা চাইতে গেলে অস্ত্র উঁচিয়ে দেন হত্যার হুমকি। আমার বাদ দিয়েও দৈনিক কালের কন্ঠ এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুযায়ী,ভাইবোনের সম্পত্তি দখল সহ এলাকার আরো অসংখ্য মানুষের সাথে করেছেন প্রতারণা।
জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া দলিল বানিয়ে একই জমি বিক্রি করেন একাধিক ব্যক্তির কাছে। জমি দিতে না চাইলে হুমকি দেন। আমাকে ২৩ লক্ষ পাওনা টাকার বদলে পিস্তল তাক করে ভয় দেখান (ঘটনার সত্যতার একাধিক ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত আছে)। একটি ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘২০১৪ থেকে ’১৬ সাল পর্যন্ত আমার পরনেই দুই কোটি টাকা থাকত। আমার এই হাতঘড়িটার দাম ২২ লাখ টাকা, আমার মোবাইল ফোনটার দাম পাঁচ লাখ টাকা। এটা গোল্ডের। শার্টের দাম থাকত দুই লাখ, প্যান্টের দাম ৮০ হাজার। বিদেশি দামি জিনিস ছাড়া আমি ব্যবহার করি না। র্যাডিসন, সোনারগাঁও, শেরাটন হোটেলে তিন বছরে খরচ করছি ৯ কোটি টাকা। এরপর ঢুকে গেছি ক্যাসিনো খেলায়।’
আরেক ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি দম্ভের সুরে বলেন, ‘জুয়া খেলতে গিয়া আমি ৭০ কোটি টাকা হারাইছি। এর পরও আমার কাছে ৭০ কোটি টাকা আছে। আমার কাছে মানুষ ৬০ কোটি টাকা পায়। এর মধ্যে ব্যাংক ২৫ কোটি আর পাবলিক পায় ৩৫ কোটি টাকা। আজ পর্যন্ত ৬০ কোটিওয়ালারা কোনো দিন আমার টেবিলে এসে টাকা চাইতে পারেনি, কারণ জানে হাত কাইট্টা রাইখা দিমু।’
উল্লেখ্য, তিনি তাঁর আপন চার ভাইয়ের সম্পত্তিও বুঝিয়ে দেননি। নিজের তিন ভাইকে পাগল বানিয়ে রেখেছেন। এর মধ্যে এক ভাই হাসপাতালে ভর্তি। এমনকি দখলে নিয়েছেন চাচা আব্দুল মোতালেবের জমিও। কায়সারের স্ত্রী শাহিন কায়সার ও দুই সন্তান নিয়ে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ২০২১ সালে স্ত্রী শাহিন কায়সারের নামে কানাডায় একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি কেনেন কায়সার, যার জন্য হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছেন তিনি। এ ছাড়া স্ত্রী ও সন্তানদের নিত্যদিনের খরচ দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠান। তা ছাড়া রাজধানীর পল্টন, সেগুনবাগিচায় তাঁর রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট।
এমতাবস্থায়, উল্লেখিত বিষয়ে, আমার পাওনা টাকা ফেরত না দিয়ে তাঁর স্হাবর- অস্হাবর সকল সম্পত্তি বিক্রি করতে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ দিতে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
অভিযোগনামায় ভুক্তভোগী আরিফুর রহমান অভিযুক্ত কায়সার ই আলম প্রধানের বিরুদ্ধে একাধিক প্রমাণের অনুলিপি সংযুক্ত করেন।
বিশ্বস্ত সূর্ত্র নিশ্চিত করেছেন অভিযুক্ত কায়সার ই আলম প্রধানের বিষয়টি আমলে নিয়ে শীঘ্রই তদন্তে নামছে দুদক।